সর্পদংশন কিভাবে এড়ানো যায়?
১. বসত বাড়ীর শোয়ার ঘরের সাথে খাবার সামগ্রী যেমন- ধান-চাল, হাঁস-মুরগী, কবুতর না রাখা উত্তম। এসব সামগ্রী ইঁদুরকে আকর্ষন করে যার খোঁজে সাপ ঢুকতে পারে।
২. ঘাস বা ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে হাঁটা এড়িয়ে চলুন। যদি হাঁটতে হয় তাহলে খুব সাবধানে হাঁটুন ও লম্বা জুতো কিংবা বুট জুতো পড়–ন। কোন গর্ত দেখলে তার মধ্যে হাত-পা ঢুকাবেন না। স্তুপকৃত লাকড়ি বা খড় সাবধানে সরান। বড় বড় পাথর বা কাঠের গুড়ি সাবধানে সরানো উচিত। যদি আপনাকে ঘাসের বা ঝোপ-ঝাড়ের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হয় খুব সাবধানে হাঁটুন প্রয়োজনে বুট পড়–ন।
৩. মাছ ধরার সময় ‘চাঁই’ বা জালের মধ্যে হাত দেওয়ার আগে সাপ আছে কিনা দেখে নিন। একিভাবে হাঁস-মুরগীর খাঁচায় হাত দেওয়ার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। প্রয়োজনে শব্দ করতে হবে।
৪. বেশীরভাগ সাপ রাতে সক্রিয় থাকে। রাতে হাঁটার সময় কিংবা প্রাকৃতিক কাজে বের হলে টর্চ লাইট ও লাঠিসহ বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
৫. বাংলাদেশের বিষধর সাপ ও তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান সম্বন্ধে জানুন, যাতে আপনি তাদের এড়িয়ে যেতে পারেন।
৬. ঘুমের সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন: খাটের উপর ঘুমাবেন, মেঝেতে ঘুমাবেন না। ঘুমানোর সময় যথাযথভাবে মশারী ব্যবহার করুন অর্থাৎ মশারী গুজে নিতে হবে। রাতের বেলায় শস্য, ফলের বাগান কিংবা মাছ পাহারা দেওয়ার সময় মাটিতে কিংবা মাচায় ঘুমানোর বা শোয়ার ব্যাপারে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
৭. বাড়ীর চার পাশ পরিস্কার রাখুন। বাড়ী ও চাষ করার জমির মধ্যে দূরত্ব রাখুন। ৮. বাড়ির আঙ্গিনা ময়লা-আর্বজনা মুক্ত রাখুন:
− সাপ ছদ্মবেশী শিকারী, অর্থাৎ তারা শিকারকে লুকানোর জায়গা থেকে আক্রমণ করতে চায়।
− ময়লা-আর্বজনা সাপ লুকানোর জন্য উপযুক্ত স্থান। পাতা, সার, খড়ের গাদা, লাকড়ির স্তুপ, কাটা ঘাসের স্তুপ সাপের জন্য লুকিয়ে থাকার পছন্দনীয় স্থান। কাজেই এগুলো বাড়ীর আঙ্গিনা থেকে সরিয়ে নিন।
৯. সাপের স্বাভাবিক বাসস্থান হতে পারে ইঁদুরের গর্ত, ছোট জঙ্গল, ইটের স্তূপ, কাঠের গুঁিড়, লাকড়ি স্তুপ, শুকনা খড়কাজেই এসব জায়গাগুলি সর্ম্পকে জানুন এবং সাবধানতা অবলম্বন করুন। বাড়ীকে সাপের সম্ভাব্য খাবার মুক্ত রাখুন। প্রজাতি ভেদে ইঁদুর, ছোট প্রাণী, তেলাপোকা, ঘাস ফঁড়িং সাপের প্রিয় খাবার।
১০.সাপ বসত বাড়ীর গর্তে বা ফাটলে লুকিয়ে থাকতে পারে বিধায় এগুলো মেরামত করুন। ১১. ঘরে প্রবেশের পূর্বে লাইটের সুইচ অন করুন।
১২.বিছানা, বালিশের নিচ ও স্কুল ব্যাগ যতœ সহকারে দেখুন। শব্দ করুন যাতে লুকিয়ে থাকা সাপ সরে যেতে পারে।
১৩.জোরে পায়ের শব্দ করে আপনার উপস্থিতি সম্বন্ধে সাপকে সর্তক করুন। সাপ বায়বীয় শব্দের প্রতি অপেক্ষাকৃত বধির তবে ভুগর্ভস্থ কম্পনের প্রতি সংবেদনশীল।
১৪. উইয়ের ঢিবিতে, গাছের গর্তে, স্তুপকৃত গাছ-তক্তা, লাকড়ির ঘন আগাছার মধ্যে হাত দিবেন না। কাস্তে ও মুঠি দিয়ে পাকা ধান কাটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। মানুষের বাসস্থানের চারপাশের্^ সাপ থাকার সম্ভাব্য জায়গা গুলো পরিস্কার রাখুন। উইয়ের ঢিবি পরিস্কার করুন, গাছের গর্ত ভরাট করুন। পতিত গাছ, জ¦ালানী লাকড়ি সরানোর সময় বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করুন।
১৫.আবর্জনা এবং জান্ক নিয়মিত অপসারন করুন। বসতবাড়ীতে সাপ আকর্ষণ করে এমন প্রানী মুক্ত রাখুন যেমন- ইঁদুর, মুগরীর বাচ্চা, গিরগিটি, ব্যাঙ।
১৬.কেবলমাত্র প্রশিক্ষিত ব্যক্তির সাপ নাড়াচাড়া ও লালন পালন করা উচিৎ। সাবধান! সাপ মেরে থাকলে খালি হাতে সাপ ধরবেন না, কারণ সাপ মরার ভান করতে পারে।
সর্প দংশন গ্রামীণ স্বাস্থ্য সমস্যা, চিকিত্সা কেন গ্রামে নয়।
সাপ দেখলে আপনি কি করবেন?
# অযথা ভয় পাবেন না।
# নিজ গতিতে সাপটিকে চলে যেতে দিন।
# অনাবশ্যক সাপ মারবেন না, কারণ সাপ কীটপতঙ্গ ও ছোট ছোট প্রাণীদের নিয়ন্ত্রণে রেখে মানুষের উপকার করে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।
# সাপ অযথা মানুষকে দংশন করে না। সুযোগ দিলে সাপ সরে যাবে। মানুষ কর্তৃক কোন ভাবে উত্ত্যক্ত হলেই কেবল সাপ দংশন করে কাজেই সাপের কাছে না ঘেঁষা উচিত।
সর্প দংশনের পর মােটর যানে দ্রুত হাসপাতালে যান।
যে সকল ঔষধ ব্যবহার করা যাবে না:
# প্রচলিত বিভিন্ন বনাজী বা হোমিওপ্যাথিক ঔষধ
# অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ- হিস্টাসিন, এভিল, ফেনারগন
# ষ্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ- ওরাডেক্সন, ডেকাসন, হাইড্রোকরটিসন
# সিডেটিভ জাতীয় ঔষধ- সেডিল, রিলাক্সেন
# অ্যাসপিরিন এবং অন্যান্য ব্যথা নিরাময়কারী ঔষধ- ডিসপ্রিন ক্লোফেনাক, সিলেকক্সিব, রোফেকক্সিব।
খাটিয়াতে মশারী টানিয়ে ঘুমালে রাতে সর্প দংশনের সম্ভাবনা কম।
........
সর্প দংশন প্রতিরােধ ও চিকিৎসা পাওয়া গ্রামীণ দরিদ্র জনগােষ্ঠির একটি প্রয়ােজনীয় স্বাস্থ্য অধিকার ও নিত্য দিনের বাঁচার অধিকার।
“বাংলাদেশে সর্পদংশন মোকাবেলা” ( Tackling Snakebite in Bangladesh )
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন